যানজটে মলিন মেরিন ড্রাইভের আনন্দ ভ্রমণ

লোকমান হাকিম :

কলাতলীর যানজটে মলিন হয়ে যাচ্ছে পর্যটকদের মেরিন ড্রাইভ সড়কে আনন্দ ভ্রমণ। শহরের সাথে মেরিন ড্রাইভের একমাত্র সংযোগকারী সড়কটি অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় এ সড়কে তীব্র যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পর্যটকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

শহরের কলাতলী এলাকার উপর দিয়ে চলে যাওয়া মাত্র ১.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সংযোগ সড়কটির প্রায় অর্ধেক অংশই এতই সংকীর্ণ যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও এনজিও কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত দু’টি জীপ পাশাপাশি চলার মতোও উপযুক্ত নয়। এ কারণে ট্রাফিক পুলিশ কিছুক্ষণ একপাশে, আর কিছুক্ষণ অন্যপাশে যান চলাচল বন্ধ রাখে। আবার এ সড়কে কোনো অবৈধ পার্কিং হলে অথবা কোনো মিনিবাস ঢুকে গেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামের ঘটনা ঘটে। আর কোন বাস বা ট্রাক প্রবেশ করলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা হয় অনেক ব্যাপক। এতে কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্র তীরবর্তী হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়কে পর্যটকদের আনন্দ ভ্রমণ যেন নিরানন্দ হয়ে যাচ্ছে।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন করা হয় ২০১৭ সালের ৬ মে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

তবে ১৯৯১-৯২ সালে সড়ক প্রকল্পটি গ্রহণের পর তখন থেকেই নির্মাণ কাজ শুরু হয় মেরিন ড্রাইভের কিন্তু মেরিন ড্রাইভের স্টার্টিং পয়েন্ট কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে বেইলি হ্যাচারি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩শ মিটার সড়ক বিগত ১৯৯৯-২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৫-০৬ সালে কলাতলী গ্রামের সংকীর্ণ সড়কটিকে সামান্য প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়।

তারপর এ সড়কটি কক্সবাজার পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাড়ে ৬ মাস যান চলাচল বন্ধ রেখে সড়ক সংস্কার করে। তবে সংস্কারকালে আগের সড়কটি প্রশস্ত না করে উল্টো সড়কের এক পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ফলে সড়কটির কিছু অংশের প্রশস্ততা ১২ ফুটেরও নীচে নেমে যায়। এতে ২টি জীপ বা মাইক্রোবাস চলাচলও দুরুহ হয়ে পড়েছে।

পৌরসভার এ সড়কটি দিয়েই শহর থেকে মেরিন ড্রাইভে যাতায়াত করতে হয়। শহরের একাংশ, রামুর হিমছড়ি ও পেঁচারদ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই মেরিন ড্রাইভ।

এছাড়া উখিয়া ও টেকনাফের একাংশের বাসিন্দারাসহ প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এ পথে চলাচল করে। শরণার্থী মিশনের সাথে জড়িত দেশী-বিদেশী কয়েক হাজার কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনী নিয়মিত মেরিন ড্রাইভ ব্যবহার করে। উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে এ পথেই যাতায়াত করেন দেশী-বিদেশী ভিআইপিরা।

হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেরিন ড্রাইভের আনন্দ ভ্রমণ কলাতলীর যানজটে এসেই ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক পর্যটক।

তারা বলেন, বিকালে শহরের কলাতলী মোড় থেকে দরিয়ানগরে আড়াই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতেই সোয়া ঘণ্টা লেগেছে অথচ পথটি মাত্র কয়েক মিনিটের। এভাবে টানা ট্রাফিক জ্যামে জনজীবন স্থবির করে রাখলে কক্সবাজারের প্রতি পর্যটকদের বিরক্তির উদ্রেক ঘটবে।

কলাতলী সড়কের কোনো পাশে একটি যানবাহন থেমে গেলে অথবা অবৈধ পার্কিং হলেই ট্রাফিক জ্যামের সূত্রপাত হয় বলে জানান ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অভ কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কলাতলীর বাসিন্দা এসএম কিবরিয়া খান।

তিনি জানান, মডার্ণ হ্যাচারি থেকে স্যুইট সাদাফ হোটেল পর্যন্তই সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া মেম্বারঘাটা থেকে বড় মসজিদ মোড় ও নাসিম মেম্বার ঘাটা এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক জ্যামের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকায় সড়কটি অপেক্ষাকৃত অনেক সংকীর্ণ।

বিগত কয়েক বছরে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি শহরের সাথে মেরিন ড্রাইভের একমাত্র সংযোগ সড়কটি সংস্কারকালে আরো সংকীর্ণ করে ফেলায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন।

তিনি জনস্বার্থে যেকোনো মূল্যে এ সড়কটি প্রশস্ত করার পাশাপাশি কলাতলীর বিধ্বস্ত মেরিন ড্রাইভটি শীঘ্রই পুনঃনির্মাণ কাজ শুরুরও দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, কলাতলী এলাকার বাসিন্দারা ড্রেনের জন্য জমি ছাড়েনি। আবার ড্রেন ছাড়া রাস্তা নির্মাণেও বাধা দিয়েছে তারা। ফলে ড্রেনের কারণে রাস্তার প্রশস্ততা প্রায় ৫ ফুট কমে গেছে। তবে ড্রেনের উপর ¯¬্যাব স্থাপন করা হলে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে।